কিয়ামতের ময়দান শেষ হয়ে গেছে। বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কেউ জান্নাতে, কেউ জাহান্নামে। কিন্তু জাহান্নামের গভীরে এখনও রয়েছেন এমন এক ব্যক্তি। যার ভাগ্য নির্ধারিত হবে সবার শেষে।
তিনি আগুনে পোড়া, ক্লান্ত, ক্ষতবিক্ষত। কখনও হামাগুড়ি দিচ্ছেন, কখনও হোঁচট খাচ্ছেন, কখনও আগুনের শিখা তাঁকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। অবশেষে, আল্লাহর রহমতে, তিনি জাহান্নামের সীমানা পেরিয়ে বাইরে আসতে সক্ষম হলেন। পেছন ফিরে জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে আবেগে বলে উঠলেন ।
“মহান তিনি, যিনি আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করেছেন! আজ আমি এমন কিছু পেয়েছি, যা না আগে কেউ পেয়েছে, না পরে কেউ পাবে।”
হঠাৎ, সামনে তিনি একটি গাছ দেখতে পেলেন। সবুজে ভরা, মনমুগ্ধকর ছায়া, ঠাণ্ডা পানি ঝরছে। তাঁর অন্তর কেঁপে উঠল। তিনি বললেন
“হে আমার রব, আমাকে এই গাছের কাছে নিয়ে যান, যেন আমি এর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারি এবং পানি পান করতে পারি।”
আল্লাহ ﷻ বললেন
“হে আদমপুত্র, যদি আমি তোমাকে এটা দিই, তুমি কি আর কিছু চাইবে না?”
তিনি শপথ করে বললেন
“না, হে আমার রব, আর কিছু চাইব না।”
কিন্তু আল্লাহ জানতেন, তাঁর চোখ যা দেখছে, তা তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তাই আল্লাহ তাঁকে গাছের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি ছায়া উপভোগ করলেন, ঠাণ্ডা পানি পান করলেন।
কিছুক্ষণ পর আরেকটি গাছ দেখা দিল। এটি আগেরটির চেয়ে আরও সুন্দর। তাঁর মন আবার টান অনুভব করল। তিনি বললেন
“হে আমার রব, এটিতেও আমাকে পৌঁছে দিন। এবার আর কিছু চাইব না।”
আল্লাহ আবারও বললেন
“তুমি তো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে।”
তবুও আল্লাহ তাঁর দুর্বলতা বুঝে তাঁকে অনুমতি দিলেন।
এভাবে তৃতীয় একটি গাছ দেখা দিল। সবচেয়ে সুন্দর, জান্নাতের দরজার কাছে। আবারও তাঁর মন ছুটে গেল সেই দিকে। আল্লাহ তাঁকে সেখানে নিয়ে এলেন।
এবার, তিনি জান্নাতের ভেতর থেকে মানুষের হাসি, আনন্দের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তাঁর অন্তরে প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগল। তিনি বললেন
“হে আমার রব, আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দিন।”
আল্লাহ ﷻ বললেন
“হে আদমপুত্র, যদি আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সমপরিমাণ আরও দিই, তুমি কি তুষ্ট হবে?”
বিস্ময়ে ও অবিশ্বাসে তিনি বললেন
“হে আমার রব, আপনি কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন। অথচ আপনি তো বিশ্বজগতের রব?”
রাসূলুল্লাহ ﷺ এই কথা বলতে বলতে হাসলেন। এমনভাবে হাসলেন যে তাঁর পেছনের দাঁত দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন
“আল্লাহ নিজেও হাসবেন, যখন তাঁর বান্দা এ কথা বলবে। আর আল্লাহ বলবেন: ‘আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছি না, বরং আমি যা চাই তা করতে সক্ষম।’”
এরপর আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি যা চাইবেন, আল্লাহ তাঁকে দেবেন তার চেয়ে দশগুণ বেশি। তাঁর জন্য প্রাসাদ, বাগান, নদী সবই থাকবে।
আর তখন তাঁর জন্য জান্নাতের হুরদের মধ্য থেকে দুই স্ত্রী আসবে এবং বলবে
“সব প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের আপনাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।”
তিনি আনন্দে বলবেন
“আমার মতো সৌভাগ্যবান আর কেউ কখনো হয়নি।”
(বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি)