Press ESC to close

আত্নগঠন ও মান উন্নয়ন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

> "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাঁর যথার্থ ভয়ে এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।" সূরা আল-ইমরান (৩:১০২)

 

আত্নগঠন

আত্নগঠন : আত্নাকে অর্থাৎ নিজের জীবনকে গঠন করা। যাকে তাযকিয়ায়ে নফ্স বা আতœার পরিশুদ্ধি বলে। শব্দটি আরবী ভাষায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয়।

  • উপযোগী বা যোগ্য হওয়া । ( To suit, Be fit for)
  •  উন্নতি, প্রবৃদ্ধি।
  • দোষ মুক্ত করা। ( Vindicate, Make free from blame)
  • পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি। ( Purity,Development)
  • খাঁটি, দোষমুক্ত, পাপমুক্ত। ( Pure Sinless, Guiltless)

 

নফস শব্দের বিশ্লেষণ ঃ দেহের যাবতীয় দাবী, দেহের ভাল মন্দ সম্পর্কে কোন চেতনা নেই। সে খিদে লাগলে খাবার, পিপাসায় পানি, গরমে ঠান্ডা দাবী করে।

 

মানুষের নফসের তিন অবস্থা :-

 

  1. নফসে আম্মারা (النفس الأمارة)

অর্থ: "মন্দের নির্দেশদানকারী প্রবৃত্তি"।  

বর্ণনা: এটি মানুষের সর্বনিম্ন স্তর, যা কুপ্রবৃত্তি, পাপ ও খারাপ কাজের দিকে ধাবিত করে।  

উদাহরণ: হিংসা, অহংকার, মিথ্যা বলা ইত্যাদি।  

কুরআনে উল্লেখ:  

"নিশ্চয় মানুষের মন (নফস) মন্দেরই আদেশ দেয়..." (সূরা ইউসুফ ১২:৫৩)  

 

  1. নফসে লাওয়ামা (النفس اللوامة)

অর্থ: "অনুতপ্ত আত্মা"।  

বর্ণনা: এটি এমন স্তর যেখানে মানুষ পাপ করার পর অনুশোচনা বোধ করে এবং তওবা করে।  

উদাহরণ: গুনাহ করার পর খারাপ লাগা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।  

কুরআনে উল্লেখ:  

"আমি শপথ করি অনুতপ্ত আত্মার (নফসে লাওয়ামা)..." (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:২)  

 

  1. নফসে মুত্মাইন্না (النفس المطمئنة)

অর্থ: "শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা"।  

বর্ণনা: এটি নফসের সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখে এবং আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করে।  

উদাহরণ: নামাজ, ধ্যান ও ইবাদতে প্রশান্তি অনুভব করা।  

কুরআনে উল্লেখ:

 

  يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ  ০ رْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً

"হে শান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে..." (সূরা ফজর ৮৯:২৭-২৮)  

 

وَلَا أُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ ০ أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَلَّن نَّجْمَعَ عِظَامَهُ

না আমি কসম খাইতেছি কিয়ামতের দিনের। আর না, আমি কসম খাইতেছি তিরস্কারী নফসের। (সূরা কিয়ামাহ : ১-২)

 

 

তাযকিয়ায়ে নফস এর গুরত্ব :-

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসূল (স:) কে যে দ্বীন বিজয়ের মিশন নিয়ে পাঠিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি ৪ ধরনের কাজ করে লোক তৈরী করেছেন। তথা রাসূল (স:) কে যে ৪টি কাজ দিয়ে পাঠানো হয়েছে তা হল :-

 

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِیۡہِمْ رَسُوۡلًا مِّنْہُمْ یَتْلُوۡا عَلَیۡہِمْ اٰیٰتِکَ وَیُعَلِّمُہُمُ الْکِتٰبَ وَالْحِكْمَۃَ وَیُزَکِّیۡہِمْ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

হে আমাদের মালিক, তাদের বংশের মধ্যে তাদের নিজেদের মাঝ থেকে তুমি এমন একজন রাসূল পাঠাও, যে তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে, তাদের তোমার কিতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে, উপরন্তু সে তাদের পবিত্র করে দেবে (হে আল্লাহ তুমি আমাদের এই দোয়া কবুল কর): কারণ অবশ্যই তুমি মহাপরাক্রমশালী ও পরম কুশলী। (সূরা বাকারা : ১২৯)

 

کَمَاۤ  اَرْسَلْنَا فِیۡكُمْ رَسُوۡلًا مِّنۡكُمْ یَتْلُوۡا عَلَیۡكُمْ  اٰیٰتِنَا وَیُزَکِّیۡكُمْ وَیُعَلِّمُكُمُ الْکِتٰبَ وَالْحِكْمَۃَ وَیُعَلِّمُكُمۡ مَّا لَمْ تَكُوۡنُوۡا تَعْلَمُوۡنَ

এই সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্যই আমি এভাবে তোমাদের কাছে তোমাদের মাঝ থেকেই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছি, যে ব্যাক্তি প্রথমত তোমাদের কাছে আমার আয়াত পড়ে শোনাবে, দ্বিতীয়ত সে তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে দেবে এবং তৃতীয়ত সে তোমাদের আমার কিতাব ও তার অন্তর্নিহিত জ্ঞান শিক্ষা দেবে, সর্বোপরি সে তোমাদের এমন বিষয়সমূহের জ্ঞানও শেখাবে যা তোমারা কখনো জানতে না। (সূরা বাকারা : ১৫১)

 

لَقَدْ مَنَّ اللہُ عَلَی الْمُؤۡمِنِیۡنَ اِذْ بَعَثَ فِیۡہِمْ رَسُوۡلًا مِّنْ اَنۡفُسِہِمْ یَتْلُوۡا عَلَیۡہِمْ اٰیٰتِہٖ وَیُزَکِّیۡہِمْ وَیُعَلِّمُہُمُ الْکِتٰبَ وَالْحِكْمَۃَ ۚ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبْلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার ঈমানদার বান্দাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের মাঝ থেকে একজন ব্যক্তিকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদের কাছে আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ পড়ে শোনায় এবং সে অনুযায়ী সে তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে, সর্বোপরি সে নবী তাদের আল্লাহর কিতাব ও তার গ্রন্থলব্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, অথচ এরা সবাই ইতিপূর্বে ¯পষ্ট ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা আল ইমরান : ১৬৪)

 

ہُوَ الَّذِیۡ  بَعَثَ فِی  الْاُمِّیّٖنَ  رَسُوۡلًا مِّنْہُمْ  یَتْلُوۡا عَلَیۡہِمْ  اٰیٰتِہٖ  وَ یُزَکِّیۡہِمْ وَ یُعَلِّمُہُمُ  الْکِتٰبَ وَ الْحِكْمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ  قَبْلُ  لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি একটি সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিরক্ষর লোকদের মাঝ থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে, তাদের জীবনেকে পবিত্র করবে, তাদের আসমানী কিতাবের কথা ও সে অনুযায়ী দুনিয়ায় চলার কৌশল শিক্ষা দেবে, অথচ এ লোকগুলোই রাসূল আসার আগ পর্যন্ত এক সু®পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা জুমআ : ২)

 

আয়াত সমূহের আলোকে নবীর ৪টি কাজ হল:-

 

   ১. তেলাওয়াতে আয়াত

   ২. তায্কীয়াহ / আত্নগঠন

   ৩. তালীমে কিতাব

   ৪. হিকমাহ

 

তায্কিয়াহ তথা আত্নগঠনের প্রধান ২টি দিক -

১.      ব্যক্তিগত তাযকিয়াঃ এ প্রকারের তাযকিয়া সমাজ গড়ার যোগ্যতা সম্পূর্ণ লোক তৈরী করে। কেননা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিরাই সমাজ গড়ে।

২.      সামাজিক তাযকিয়াঃ সমাজকে এমন পবিত্র করে গড়ে তোলা যাতে সহজেই সব মানুষ ব্যক্তিগত তাযকিয়া হাসিল করার সুযোগ পায়।

 

 

ব্যক্তিগত তাযকিয়ার বিভিন্ন দিক -

  • ঈমানের তাযকিয়াঃ তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের সঠিক ধারণা ও মযবুত বিশ্বাষ।
  • ইলমের তাযকিয়াঃ অহীর জ্ঞানকে একমাত্র নিভুল মনে করে যাবতীয় জ্ঞানকে যাচাই বাছাইকরার যোগ্যতা।
  • আমলের তাযকিয়াঃ তায়াল্লোকাত ও মুয়ামেলাতে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের যোগ্যতা।

 

 

১. তা‘ল্লুকাত (تعلقات)  অর্থ:  

আরবি শব্দ "تعلق" (তা‘ল্লুক) থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘আসক্তি, আবদ্ধতা বা সম্পর্ক’।  

ইসলামে প্রয়োগ:  

- এটি মূলত ‘আত্মার সাথে জাগতিক বা আধ্যাত্মিক বস্তুর অতিরিক্ত টান’ বোঝায়।  

- উদাহরণ:  

  - দুনিয়ার মোহ (টাকা, পদমর্যাদা, পারিবারিক আবেগ)।  

  - এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ব্যক্তির প্রতি অস্বাস্থ্যকর আবেগ (যা ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়)।  

কুরআনের ইঙ্গিত:  

> "তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে..." (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৯)।

 

২. মু‘আমালাত (معاملات) অর্থ:  

আরবি শব্দ "عمل" (আমল) থেকে উদ্ভূত, অর্থ ‘লেনদেন, আচরণ বা সামাজিক interactions’।  

ইসলামে প্রয়োগ:  

- এটি ‘মানুষের মধ্যে পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্ব’ সম্পর্কিত বিষয়।  

- উদাহরণ:  

  - ব্যবসা-বাণিজ্য (হালাল উপার্জন, সুদ এড়ানো)।  

  - পারিবারিক আইন (বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার)।  

  - প্রতিবেশী ও সমাজের সাথে সদাচরণ।  

হাদিসের নির্দেশনা:  

> "তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।" (বুখারি)।

 

গুরুত্ব:  

- তা‘ল্লুকাত নিয়ন্ত্রণ করা নফসের উন্নতির জন্য জরুরি।  

- মু‘আমালাত সঠিকভাবে পালন করা সমাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আবশ্যক।  

 

সতর্কতা:  

- তা‘ল্লুকাত যদি মু‘আমালাতকে প্রভাবিত করে (যেমন: লোভে হারাম উপার্জন), তাহলে তা গুনাহের কারণ হয়। 

 

 

আত্নগঠনের প্রয়োজনীয়তা :-

 

১.      আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

قَدْ  اَفْلَحَ مَنۡ  تَزَکّٰی

যে ব্যাক্তি হেদায়াতের আলোকে নিজের জীবন পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে। (সূরা আল আলা : ১৪)

 

২.     ব্যক্তির নিজের সফলতার জন্য।

قَدْ  اَفْلَحَ  مَنۡ  زَکّٰىہَا  ০ وَ قَدْ خَابَ مَنۡ  دَسّٰىہَا 

নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে সেই সফলকাম যে পাপ থেকে দূরে থেকে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর যে ব্যক্তি পাপে নিমজ্জিত হয়ে তাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে। (সূরা আস শামস : ৯-১০)

 

৩.     দেশ ও সমাজকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।

وَالَّذِیۡنَ ہُمْ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ

যারা রীতিমতো যাকাত প্রদান করে। (সূরা মুমিনুন : ৪)

 

৪.     পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হওয়ার জন্য।

“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা। যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমার আনীত আদর্শের অনুসারী না হবে।” (শারাহস সুন্নাহ)

 

৫.আল্লাহর নির্দেশের আওতায় নিজেকে শামিল করানোর জন্য।

 ہُوَ الَّذِیۡ  بَعَثَ فِی  الْاُمِّیّٖنَ  رَسُوۡلًا مِّنْہُمْ  یَتْلُوۡا عَلَیۡہِمْ  اٰیٰتِہٖ  وَ یُزَکِّیۡہِمْ وَ یُعَلِّمُہُمُ  الْکِتٰبَ وَ الْحِكْمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ  قَبْلُ  لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি একটি সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিরক্ষর লোকদের মাঝ থেকে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে, তাদের জীবনেকে পবিত্র করবে, তাদের আসমানী কিতাবের কথা ও সে অনুযায়ী দুনিয়ায় চলার কৌশল শিক্ষা দেবে, অথচ এ লোকগুলোই রাসূল আসার আগ পর্যন্ত এক সু®পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরা জুমআ : ২)

 

 

৬.     মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। মানুষের প্রবৃত্তির প্রভাবে বাহ্যিক প্রভাবও পড়ে। রাসূল (স:) বলেন -

“সাবধান! অবশ্যই দেহের মধ্যে এমন এক টুকরা গোস্ত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন গোটা দেহটাই সুস্থ থাকে। আর যখন তা অসুস্থ হয়ে যায় তখন গোটা দেহটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর জেনে রাখ সেটাই হচ্ছে 'অন্তকরণ'।” (বুখারী, মুসলিম)

 

৭.     আত্নগঠনের মাধ্যমে আখেরাতের জবাবদিহিতার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা যায়।

 

৮.     সর্বোপরি আন্দোলনের প্রয়োজনে আমাদের আত্নগঠন করা প্রয়োজন।

 

 

 

আত্নগঠন বা আত্নশুদ্ধির উপায়ঃ সাধারণত ২টি পদ্ধতিতে নিজের আত্নকে পরিশুদ্ধি করা যায় -

 

  1. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে।
  2. অসৎকাজ বা আসল পরিহার করার মাধ্যমে।

 

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় -

 

   ১. ইলম ও জ্ঞান অর্জনঃ জ্ঞানই শক্তি। রাসূল (স:) বলেন -

 

ফরযিয়াতের পর্যায় হচ্ছে -যার উপর যে দায়িত্ব পালন করা ফরয , সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রয়োজনে অহীর যতটুকু ইলম জানা জরুরী ততটুকু ইলম অর্জনই ফরয। আল্লাহ বলেন -

 

وَ مِنَ النَّاسِ وَ الدَّوَآبِّ وَ الْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُہٗ  کَذٰلِکَ ؕ اِنَّمَا یَخْشَی اللہَ مِنْ عِبَادِہِ  الْعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللہَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ

 

একইভাবে মানুষ, যমীনের ওপর বিচরণশীল জীবজন্তু এবং পশুসমূহও রয়েছে নানা রংয়ের; আল্লাহ তায়ালাকে তার বান্দাদের মাঝে সেসব লোকেরাই বেশী ভয় করে যারা এ সৃষ্টি নৈপুণ্য স¤পর্কে ভালো করে জানে, আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির : ২৮)

 

اَمَّنْ ہُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ  الَّیۡلِ سَاجِدًا وَّ قَآئِمًا یَّحْذَرُ الْاٰخِرَۃَ  وَ یَرْجُوۡا رَحْمَۃَ  رَبِّہٖ ؕ قُلْ ہَلْ  یَسْتَوِی الَّذِیۡنَ یَعْلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعْلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الْاَلْبَابِ

 

যে ব্যক্তি রাতের বেলায় বিনয়ের সাথে সিজদাবনত হয় কিংবা দাড়িয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করে এবং পরকালের আযাবের ভয় করে, সর্বাবস্থায় তার মালিকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে; হে নবী! এদের বলো, যারা আল্লাহ তায়ালাকে জানে আর যারা তাকে জানে না, তারা কি এক সমান? আসলে একমাত্র জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই এসব তারতম্য থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা যুমার : ৯)

 

اِقْرَاۡ بِاسْمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ

 

পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক : ১)

 

রাসূল (স:) বলেন - রাতের কিছু সময় ইলম চর্চা করা সারা রাতে জেগে থাকার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

 

 

   ২. যথাযথ ভাবে মৌলিক ইবাদত সমূহ আদায় করা। বিশেষ করে নামাজ -

 

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوۡنَ ۙ﴿۱﴾ الَّذِیۡنَ ہُمْ فِیۡ صَلَاتِہِمْ خٰشِعُوۡنَ ۙ﴿۲

 

নিঃসন্দেহে সেসব ঈমানদার মানুষরা মুক্তি পেয়ে গেছে। যারা নিজেদের নামাজে একান্ত বিনয়াবনত। (সূরা মুমিনুন : ১-২)

 

وَاسْتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبْرِ وَالصَّلٰوۃِ ؕ وَ اِنَّہَا لَکَبِیۡرَۃٌ اِلَّا عَلَی الْخٰشِعِیۡنَ

 

হে ঈমাদার ব্যক্তিরা তোমরা সবর ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্যে চাও; যাবতীয় হক আদায় করে নামায প্রতিষ্ঠা করা অবশ্যই একটা কঠিন কাজ, কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা। (সূরা বাকারা : ৪৫)

 

 

রাসূল (স:) এর নামায -

 

    * পেরেশান অবস্থায় রাসূল (স:) নামাজের মাধ্যমে স্বস্তিবোধ করতেন।

    * দীর্ঘ সময় দাঁড়াবার দরুন রাসূল (স:) এর পা বা হাঁটু অবশ হয়ে যেত।

 

সাহাবায়ে কেরামের নামাজ -

 

  • বল্লমের আঘাতে বেহুশ থাকা অবস্থায় হযরত ওমর (রা:) কে নামাজের কথা বললে তিনি হুঁশ ফিরে পান।
  • হযরত আবু বকর (রা:) খুঁটির মত নিশ্চল হয়ে নামাযে দাঁড়াতেন।
  • হযরত উসমান (রা:) এর হত্যাকারীদেরকে লক্ষ্য করে তাঁর বিবি বললেন -“ তোমরা এমন লোককে হত্যা করলে যে রাতের নামাজে কুরআন খতম করতেন। ”
  • হযরত আলী (রা:) এর পায়ে বিদ্ধ তীর সিজদাহরত অবস্থায় সহজে খোলা গেল।
  • হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) অসুস্থ অবস্থায় চোখের চিকিৎসা ত্যাগ করলেন, কারণ চিকিৎসক সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সিজদা দিতে নিষেধ করেছিলেন ।
  • হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের (রা:) নিশ্চল থামের মত দাঁড়াতেন এবং বলতেন এটাই খুশু।
  • হযরত আবু তালহা আনসারী (রা:) বাগানে নামাজের সময় পাখির দিকে খেয়াল করায় রাকায়াতের সংখ্যা ভুলে যাওয়ার কাফফারা হিসেবে ঐ বাগানটাই আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য রাসূল (স:) কে দিয়ে দিলেন।
  • এক ব্যক্তি রাসূল (স:) এর নিকট উপদেশ চাইলে তিনি বললেন - যখন নামাজে দাঁড়াবে, জীবনের শেষ নামায মনে করে পড়বে।

 

 

জামাতের সাথে নামায আদায় করা -

 

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন- আল্লাহর কসম, আমার ইচ্ছা হয় আমি কিছু জ্বালানি কাঠ একত্র করার আদেশ দিব এবং তা একত্র করা হবে। অতঃপর নামাজের জন্য নির্দেশ দিব। ফলে এর নিমিত্ত আযান দেয়া হবে। তৎপর কাউকে হুকুম করব সে লোকদের ইমামতি করবে। অতঃপর আমি সেইসব লোকের বাড়ী যাবো যারা নামাজে আসেনি এবং তাদেরসহ তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিব। (সহীহ বুখারী)

 

রাসূল (স:) বলেছেন - একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া সাতাশ গুণ বেশী সওয়াবের। (সহীহ বুখারী)

 

   ৩. কুরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য বুঝে পড়া।

   ৪. নফল ইবাদতের প্রতি যথাসম্ভব গুরুত্ব আরোপ করা। বিশেষ করে তাহাজ্জুতের নামায আদায় এবং প্রতি মাসে নফল রোযা রাখা।

 

রাসূল (স:) বলেছেন - “প্রত্যেক নবীর জন্য আল্লাহ একটা করে খায়েশ পয়দা করেছেন, আমার খায়েশ রাতের নামায।”

 

হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন - “একদা রাসূল (স:) তাহাজ্জুদের নামাযে এত বেশী সময় ধরে দাঁড়ালেন যে, তার দু পায়ের পাতা ফুলে গেল। তখন বলা হলো হুজুর আপনি কেন এমন করেন? অথচ আল্লাহ তো আপনার আগের ও পেছনের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। রাসূল (স:) জবাব দিলেন - আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না। ” (বুখারী, মুসলিম)

 

  • আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা।

 

مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمْوَالَہُمْ فِیۡ سَبِیۡلِ اللہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِیۡ كُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ ؕ وَاللہُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَاللہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ

 

যারা নিজেদের ধন স¤পদ আল্লাহ তায়ালার পথে খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতো, যে বীজটি বপণ করার তা থেকে একে একে সাতটি শীষ বেরুলো, আবার এর প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ শস্য দানা; আসলে আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন; আল্লাহ তায়ালা অনেক প্রশস্ত, অনেক বিজ্ঞ। (সূরা বাকারা : ২৬১)

 

   ৫. সার্বক্ষণিক দোয়া ও যিকির।

   ৬. অবসর সময় হোক আর ব্যস্ততার সময় হোক সকল সময় ও অবস্থায় আল্লাহকে স্বরণ করা।

 

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوۡبُہُمۡ بِذِكْرِ اللہِ ؕ اَلَا بِذِكْرِ اللہِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوۡبُ

 

যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহর যেকেরে অন্তকরণ প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর যেকেরই অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করে। (সূরা আর রাদ : ২৮)

 

রাসূল (স:) বলেছেন- তোমার জিহবা যেন সবসময় আল্লাহর যিকিরে সিক্ত থাকে।

 

অসৎ কাজ বা আচরণ পরিহার করা :-

 

    * মিথ্যা কথা,কাজ , আচরণ পরিহার করা।

    * গীবত, চোগলখুরী ,পরনিন্দা ও পরচর্চা পরিহার করা।

    * কানাকানি ফিসফিসানী পরিহার করা।

 

রাসূল (স:) বলেছেন - সাবধান! হিংসা করো না । কারণ হিংসা মানুষের সৎ কাজ গুলোকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন শুকনো কাঠকে জালিয়ে ছাই করে দেয়।

 

   ৭. প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার করা।

   ৮. গর্ব ও অহংকার পরিহার করা। গর্ব ও অহংকার করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই রয়েছে।

 

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِی الْاَرْضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ  اللہَ  لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوۡرٍ

 

হে বৎস, কখনো অহংকারবশে তুমি মানুষদের জন্য তোমার গাল ফুলিয়ে রেখে তাদের অবজ্ঞা করো না এবং আল্লাহর যমীনে কখনো ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বিচরণ করো না; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উদ্ধত অহংকারীকেই অপছন্দ করেন। (সূরা লোকমান : ১৮)

 

وَاعْبُدُوا اللہَ وَلَا تُشْرِكُوۡا بِہٖ شَیۡئًا وَّ بِالْوَالِدَیۡنِ  اِحْسَانًا وَّبِذِی الْقُرْبٰی وَالْیَتٰمٰی وَالْمَسٰکِیۡنِ وَالْجَارِ ذِی الْقُرْبٰی وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ وَابْنِ السَّبِیۡلِ ۙ وَمَا مَلَکَتْ اَیۡمَانُكُمْ ؕ اِنَّ اللہَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ مُخْتَالًا فَخُوۡرَا

 

তোমরা এর আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত করো, কোনো কিছুকেই তার সাথে অংশীদার বানিয়ো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, আরো যারা তোমাদের ঘনিষ্ঠ আতœীয়, এতীম, মিসকীন, আতœীয়-প্রতিবেশী, অনাতœীয়-প্রতিবেশী, তোমার পথচারী সঙ্গী ও তোমার অধিকারভুক্ত দাস-দাসী, তাদের সবার সাথেও ভালো ব্যবহার করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক। (সূরা নিসা : ৩৬)

 

قِیۡلَ  ادْخُلُوۡۤا اَبْوَابَ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ۚ فَبِئْسَ مَثْوَی الْمُتَکَبِّرِیۡنَ

 

ওদের তখন বলা হবে, যাও, প্রবেশ করো জাহান্নামের দরজা দিয়ে, তোমারা সেখানেই চিরদিন থাকবে, ঔদ্ধত্য প্রকাশকারীদের জন্যে কতো নিকৃষ্ট হবে এ ঠিকানা! (সূরা যুমার : ৭২)

 

হাদিসে কুদসীতে উল্লেখ রয়েছে আল্লাহ বলেন - গর্ব হল আমার চাঁদর। যারা গর্ব করে তারা যেন আমার চাঁদর নিয়ে টানা হেচড়া করে।

 

   ৯. মুনাফিক / নেকাকী মুক্ত জীবন যাপন করা।

 

اِنَّ الْمُنٰفِقِیۡنَ فِی الدَّرْکِ الۡاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ ۚ وَلَنۡ تَجِدَ لَہُمْ نَصِیۡرًا

 

এ মোনাফেকরা জাহান্নামের সর্বনিুস্তরে অবস্থান করবে, তুমি সেদিন তাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী খুজে পাবে না। (সূরা নিসা : ১৪৫)

 

 

মুনাফিকের আলামত তিনটি-

 

    * কথা বললে মিথ্যা বলে।

    * ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে।

    * আমানত রাখলে খেয়ানত করে।

 

আত্নগঠনের জন্য কতিপয় বাস্তব পরামর্শঃ

 

  • দ্বিবেকের বিরুদ্ধে কিছুই চলবেনা বলে মযবুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। নফসের বিরুদ্ধে জিহাদকে রাসূল বড় জিহাদ বলেছেন।
  • মনকে সবসময় কাজে ব্যস্ত রাখা যাতে কোন সময় সে অবসর না পায়। এ জন্য করণীয়-
  • সবসময় সব অবস্থায় ইসলামী বই সাথে রাখুন। যখনই মন অবসর হয়ে যায়, ঐ বই পড়–ন।
  • অনেক সময় বই পড়ার পরিবেশ বা সুযোগ থাকে না। তখন কয়েকটি কাজ করতে পারেন।
  • কুরআন পাকের মুখস্ত করা সূরা গুলো পড়তে থাকুন। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে গুণগুণ করে পড়তে থাকুন।
  • কালেমা তাইয়েবা, তিন তাসবিহ , দরুদ বা যে কোন যিকির মুখে ও মনে জপতে থাকুন।
  • আপনার করণীয় কাজ গুলো সুষ্ঠুভাবে করার পরিকল্পনা চিন্তা করুন। কারো সাথে আলোচনার কথা থাকলে বিষয়টি মনে মনে গুছিয়ে নিন।
  • পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায়ের সর্বাতœক চেষ্টা চালানো ও এবং তাহাজ্জুদের নামাযের অভ্যাস গড়ে তোলা।
  • প্রত্যেক কাজ করার সময় কাজের ব্যপারে আল্লাহর ও রাসূল (স:) এর তরীকা অনুযায়ী করা হচ্ছে কিনা সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
  • “ অনেকের চেয়ে আমি ভাল আছি” শয়তানের দেয়া এ ধোকা থেকে বাঁচা এবং অপরের দোষ তালাশ না করে নিজের দোষ তালাশ করা।

 

 

আত্নগঠনের জন্য কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ :-

 

  • দ্নিজের দুর্বলতার তালিকা তৈরী করে এক একটা দূর করার চেষ্টা।
  • বারবার ত্র“টি হতে থাকলে নিজের উপর জরিমানা ,নফল নামায ও রোযা এবং টাকার জরিমানা করা দরকার।
  • দ্বীন কায়েমের সাথে সম্পর্কহীন প্রবনতাকে প্রশ্রয় না দেওয়া। যেমন- খেলা দেখা ও অপ্রয়োজনীয় বই পড়ে সময় নষ্ট করা।
  • মগজ ও পেটের পাহারা দেওয়া যাতে কুচিন্তা ও হারাম খাদ্য ঢুকতে না পারে।
  • হারাম দৃশ্য পথে ঘাটে পত্রিকায়, বিজ্ঞাপনে চোখে পড়ার সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে। যেমন- মলের উপর কেউ দৃষ্টি দেয় না।

 

 

 

মান উন্নয়ন :

 

মান উন্নয়ন কি?

 

  • এটি ছোট অবস্থান হতে বড় অবস্থানে যাওয়া। এক মান উন্নয়ন বলে। যাকে প্রমোশন বলা হয়।
  • মান উন্নয়ন হচ্ছে ব্যক্তির মর্যাদার একটি স্তর। যার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সচেতনতার সৃষ্টি হয়।
  • সাংগঠনিক পরিক্ষায় কোন জনশক্তির কর্মী থেকে সাথী হওয়া, আর সাথী থেকে সদস্য হওয়াকে মান উন্নয়ন বলা হয়।

 

 

 মান উন্নয়ন কেন করব ?

 

  • দ্ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচার জন্য। রাসূল (স:) বলেছেন- ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে উত্তম হলো না।
  • ঈমানের হেফাজতের জন্য, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য।
  • মুমিন ভাল কাজের প্রতিযোগীতা করে।

 

মান উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দিকঃ মান উন্নয়নের জন্য একজন ব্যক্তিকে তিনটি দিকের প্রস্তুতি নিতে হবে-

 

   ১. জ্ঞানগত দিক

   ২. আমলগত দিক

   ৩. সাংগঠনিক দিক

 

জ্ঞানগত দিক :-

 

  1. বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত জানা। রাসূল (স:) বলেছেন - এমন অনেক কুরআন তিলাওয়াত কারী আছে যাদের প্রতি কোরআন অভিস¤পাত বর্ষণ করে।
  2. কর্মী হলে সাথী সিলেবাস আর সাথী হলে সদস্য সিলেবাস শেষ করা।
  3. প্রয়োজনীয় বই নোট করা।
  4. ১টি দারসুল কুরআন ও ১টি দারসে হাদিস তৈরী করতে হবে।
  5. মুখস্থ করতে হবে:-
    1. অর্থসহ ১০টি সূরা।
    2. বিষয় ভিত্তিক আয়াত ৩০টি।
    3. বিষয় ভিত্তিক হাদীস ২০টি।

 

  1. সংগঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। কেন্দ্রীয় সংগঠন, সেক্রেটারীয়েট, পরামর্শ সভা, থানা ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীলের নাম জানা।
  2. শরীয়তের মৌলিক মাসআলা জানা। অযু, জানাযা, তায়াম্মুম, কসর নামায ইত্যাদি।
  3. বিভিন্ন দিবস সম্পর্কে জানা। কুরআন দিবস, শহীদ দিবস, ইসলামী শিক্ষা দিবস, বালাকোট দিবস।
  4. সমসাময়িক সাধারণ জ্ঞান জানতে হবে।
  5. নিম্মোক্ত বই গুলোর উপর সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে-
  • কর্মপদ্ধতি
  • সংবিধান
  • চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান
  • ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের শর্তাবলী
  • সত্যের সাক্ষ্য

 

 

আমলগত দিক:-

 

  1. নিয়মিত ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ করা।
  2. নামায জামায়াতের সাথে নিয়োমিত আদায় করা।
  3. নামায কাজা করা যাবে না।
  4. নিয়মিত কোরআন, হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য পড়তে অভ্যস্ত হওয়া।
  5. পর্দা মেনে চলা।
  6. লেনদেনের পরিচ্ছন্নতা থাকা।
  7. নফল ইবাদত পালনে অভ্যস্ত হওয়া।
  8. আনুগত্যের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্ততা থাকা।
  9. চারিত্রিক মাধুর্যতা অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো।
  10. মৌলিক ও অসৎ গুণাবলী থেকে দূরে থাকা।
  11. কথা ও কাজের মিল থাকা।
  12. পরীক্ষায় নকল না করা।

 

 সাংগঠনিক দিক :-

 

  1. আন্তরিকতার সাথে সংগঠনের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা।
  2. আমানতদারী হওয়া।
  3. অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী হওয়া।
  4. সংগঠনের কর্মসূচী যথাযথভাবে পালন করা।
  5. সাংগঠনিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে জানা।